'এই নীলা, কোথায় যাচ্ছিস?'
'চল না আমার সাথে, তোকে লাঞ্চ করাবো।'
'হুট করে, আগে
তো বলিস নি?'
'একজনের সাথে দেখা করতে যাবো, ফেসবুকে পরিচয়।'
'না না ভাই, আমি যাবো না, তুই যা, তোর এই পাগলামির সাথে আমি নাই, আর কয়জনের কাছ
থেকে এভাবে খাবি? আমার এসাইনম্যান্ট বাকি আছে ওটা শেষ করতে হবে।'
'আরে করবিনে, চল না আজই শেষ।'
'না, তুই মজা লুট, আমি নাই। যতসব
লুইচ্যাদের সাথে, গেলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে বুকের দিকে।
এসব পুরুষদের দেখলেই আমার বমি আসে, তুই যা আমি যাবো না।'
বলে নীলা রিক্সা ডেকে বাড়ির দিকে চলে গেলো। বাসায়
ঢুকেই দেখতে পেল কে যেন এসেছে। সে তাকে এড়িয়ে চলে গেল তার রুমে। কিছুক্ষণ পর তার
মা এসে বলল,
'তুই গোসল করে, তৈরী হয়ে নে।'
'কেন কি হয়েছে? তৈরী হবো মানে! সবে তো এলাম।'
'তোর বাবার বন্ধু এসেছে, তোকে দেখতে চেয়েছে।'
'তো দেখলে তো এমনিই দেখতে পারে, তৈরী হওয়া লাগবে কেন?'
'যা বলেছি তাই কর, তোর বাবা আমাকে পাঠিয়েছে, যা তারাতারি।'
বিরক্তি নিয়ে গোসল করতে চলে যায় নীলা, শাওয়ার ছাড়তেই
তার মনে হলো তার বাবা একদিন তার মাকে বলছিল অরন্যের কথা। তার সাথে নাকি বিবাহ ঠিক
করেছে নীলার। নীলার মনে ভয় কাজ করছে, মনে মনে ভাবলো, এই লোকটাই কি অরন্যের বাবা? তার মনে হলো
তার স্বপ্নগুলো বোধহয় আজই মাটিতে মিশে যাবে। কিছুক্ষণ স্থির থেকে সে মার কথা
অনুযায়ী কাজ করতে লাগলো। সাজতে ভালো লাগে না তার, শুধু কপালে
ছোট্ট একটি টিপ আর লিপস্টিক দিয়ে আসলো তার বাবার বন্ধুর নিকট। উনি নীলাকে দেখেই
বলে উঠলো মাশাল্লাহ্। তার বাবার দিকে তাকিয়ে তিনি বলতে লাগলো,
'দোস্ত তাহলে আজই তোর মেয়েকে ছেলের জন্য আংটি পরিয়ে যাই।'
'আর আমি তোকে জানিয়ে দিবো, বিয়ের ডেট কবে'- বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে আংটির বাক্স থেকে আংটিটা
বের নীলাকে বলল,
নীলা তার মা'র দিকে তাকিয়ে তৎক্ষণিক তার বাবার
দিকে তাকালো, তার বাবা চোখ
রাঙ্গাতেই সে চোখ নামিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। উনি আংকটি পড়িয়ে দিলো নীলার হতে। নীলা
কিছুক্ষণ বসে চলে গিয়ে লাফিয়ে পড়লো বালিশের উপর। ঘন কালো মেঘ জমাট বেঁধে বুক ফেঁটে
আষাঢ়-শ্রাবণের ঢল বইতে লাগলে বালিশের
উপর।
'অরণ্য খেতে আয়, তোর বাবা বসে আছে।'
'জ্বি মা, আসছি।'
বলে অরন্য খাবার টেবিলে আসলো। তার বাবা অরণ্য কে বলতে লাগলো,
'অরণ্য, তোমার
জন্য আমার বন্ধুর মেয়েকে আংটি পড়িয়ে আসছি, মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, মেয়ে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। আশা করি তুমি দ্বিমত করবে না। আগামী
মাসের ৭ তারিখ বিয়ের তারিখ ফেলতে চাই। তোমার অফিসিয়াল ব্যস্ততা নাইতো।'
'আমি কি তোমার মতের উপর কখনো কিছু বলেছি। তুমি যা বলবে তাই হবে। আমি
সব ম্যানেজ করে নিবো' বলে
অরণ্য উঠে গেল।
কিছুক্ষণ পর অরণ্যের বাবা নীলা বাবা ফোন করে বিয়ের
ডেট পাকা করে ফেলল।
'এই নীলা তোর কি হয়েছেরে, এত চুপ কেন?'
'চল আজকে তোকে নিয়ে ঘুরবো, বলাকায় সিনেমা দেখবো, খাবো’
বলে আমার হাতটি ধরে টান দিল।
আমি বললাম, 'দাড়া যাবতো, অরুন স্যারের ক্লাস করবি না ?'
'না আজ করবো না, চল।'
'তাহলে চল, আমার সমস্যা নাই।'
ক্যাম্পাস থেকে রিক্সায় উঠলাম, রিক্সায় নীলা কে জিজ্ঞেস করলাম, 'কিরে তোর কি হয়েছে?'
'আজ আমার মন খারাপ, তাই।'
'তো মন খারাপ ক্যান? তাইতো জানতে চাচ্ছি।'
'বলব, এখন না। আগে বলাকায় গিয়ে সিনেমার টিকেট নিয়ে নেই, তারপর
বলব। এখন নাম রিক্সা থেকে।'
বলে দু’জন মেয়েদের টিকেটের লাইনে, টিকিট নিয়ে হলরুমে ডোকার
সময় নীলা দেখে তার সামনের মেয়েটার পিছনে একটি ছেলে খোঁচা মেরে চলে যাচ্ছে, নীলা সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটিকে থামাল। সে ছেলেটিকে বলল,
'আপনি ওনাকে খোঁচা মারলেন কেন?'
'কোথায় মারছি, আপনি দেখেছেন? আর আপনার কি, আপনাকেতো
মারি নাই। নাকি আপনাকে টাচ করি নাই বলে আপনার ভালো লাগছে না।'
আমি বললাম, 'চল নীলা, বাদ দে।'
'বাদ দিবো মানে, এসব লুইচ্ছাদের কি করে শায়েস্থা করতে হয় আমার জানা
আছে।'
বলে একটা চড় বসিয়ে দিল ছেলেটার গালে। আসে পাশের
লোকজন দেখে জড় হয়ে গেল আমাদের কাছে জানতে চাইল কি হয়েছে? আমরা বলতে শুরু করতেই ছেলেটি আড়ালে গিয়ে বসে পড়লো। আমরা ঘটনাটি
বলে আমাদের সিটে গিয়ে বসলাম।
সিনেমা অর্ধেক শেষ করে আমরা দুজনে লাঞ্চ করতে মিডনাইট
সানে গেলাম। ওখানে নীলাকে জিজ্ঞাসা করলাম-
'এবার বল তোর মন খারাপ কেন?'
'আমার সাথে তোর বোধহয় আজই শেষ দেখা।'
'আমার ৭ তারিখ বিয়ে, ক্যাম্পাসে আর আসতে পারবো
কিনা জানি না।'
'কি বলছিস এসব? কীভাবে কি হল?'
'জানি না, আমার বাবাকেতো চিনিস, আমি কিছুই জানি না, ছেলেকেও চিনি না। কোথায় বিয়ে তাও জানি না।'
'আমার অস্থির লাগছে, তুই জিজ্ঞেস করিসনি?'
'না, জিজ্ঞেস করিনি, কি লাভ! আর সব পুরুষ একই রকম, দেখি ভাগ্যে কি আছে, তবে সংসার করবো না এতটুকু জানি।'
'আমার ভাবতেই অবাক লাগছে, কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।'
'আমার বাবার মত বাবা হলে অবিশ্বাসের কিছু নেই রে। চল উঠা যাক , নিউ মার্কেট যাব।'
'কেন, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।'
'মনে হচ্ছে তোর বিয়ে, চল, তোকে একটা
গিফট দিব, আমার শেষ স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবি।'
আমি যেন সত্যিই শক্তি পাচ্ছি না। তারপরও গেলাম
নিলার সাথে। দোকান ঘুরে ঘুরে সে আমাকে এক জোড়া কানের দুল কিনে দিল।
যাবার সময় সে বলে গেল, আজ রাত হয়ে যাবে বাসায় ফিরতে তাই বাবা বোধহয় আর
ক্লাসে আসতে নাও দিতে পারে। তাছাড়া গ্রামে চলে যাবো দু’দিন
পর, সেখানেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হবে, তো
আর বোধহয় দেখা হবে না, ভালো থাকিস। আর শুন, তোর ছেলে ঘুরানো কাজটা বন্ধ করিস, এটা উচিত না।
বিদায় নিয়ে সে বাসে উঠে গেল, আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে
রইলাম।
৭ তারিখ রাত, নীলা বঁধু বেশে অরণ্যের রুমে, তার সবকিছু বিরক্ত
লাগছে, চারিপাশে ফুল দিয়ে সাজানো, তার
ইচ্ছে হচ্ছে এই সুন্দর ফুলগুলোকে একসাথে করে পা দিয়ে পিষে ফেলতে। কিছুক্ষণ পায়চারী
করে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সে ভাবতে থাকলো, মানুষের জীবন
একান্তই নিজের তবুও তার উপর কেন নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই? কেন
অন্যমানুষ দ্বারা জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়? তাহলে এ জীবন রেখে কি
লাভ, তারচেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
হঠাৎ দরজা লক করার শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে
অরণ্য, তখন তার আচমকা ভয়ংকর সব পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়, মক্তবে পড়ার সময় হুজুরের উরুতে বসিয়ে রাখার কথা,
গৃহশিক্ষকের পা দিয়ে খোঁচা দেওয়ার কথা, কলেজের
শিক্ষকের পিঠে হাত দিয়ে ব্রা পরেছি কিনা তা চেক করার কথা। তার মনে পড়ে যায় সবচেয়ে
ভয়ংকর স্মৃতিটা, তার বাবার কাজের বুয়ার সাথে রান্না ঘরে শুয়ে
থাকার দৃশ্যটা, ঘটনাটি মনে হলেই তার দম বন্ধ হয়ে যায়,
পুরুষদের প্রতি ঘৃণা প্রকট আকার ধারণ করে, তার
মনে হতে থাকে অরণ্য দরজাটা লাগিয়ে পুরুষ নামের ভয়ংকর জন্তুর মতো এখনই তার শরীর
নিয়ে সে মেতে উঠবে, সে ভাবতেই শিউরে উঠে, হাত কাঁপতে থাকে আতঙ্কে। হঠাৎ শুনতে পায়
নীলা কোন উত্তর না দিয়ে আবার জানালার দিকে তাকিয়ে
থাকে।
'হুম...আপনি দাঁড়িয়ে আছেন যে? অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ুন, অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছেন। '
নীলা, কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
'শুনুন, আমি আপনাকে বিয়ে করেছি বাবার জন্য, আমাকে আপনি আজই
ডিবোর্স দেন। আমি এখনই চলে যাবো।'
অরণ্য কিছুক্ষণ থমকে থেকে বলল,'এতো রাতে আজ কোথায় যাবেন? বাবার বাড়ী তো যেতে পারবেন না, একটু মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা কারুন।'
'না, প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন, এখুনি ব্যবস্থা করুন, আমি চলে যাবো।'
'দেখুন আপনি একটু বোঝার চেষ্ঠা করুন, তাৎক্ষনিক কিছু হয় না, ডিবোর্স
আদালতের ব্যাপার, কীভাবে আপনাকে আজ দিব বলুন আর এখন আপনি
যাবেন কোথায়? আমাকে আপনি বিশ্বাস করুন। আপনি যা চান তাই হবে।
কিন্তু এখন শান্ত মাথায় বোঝার চেষ্ঠা করুন, এখন যদি আপনি চলে
যান, বাড়ির সবাই জানবে, আপনার বাবা
জানবে, আপনার বাবার আর আমার বাবার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক শেষ
হয়ে যাবে, দুইটাদিন পরতো আমরা ঢাকায় চলে যাবো, তারপর আপনি যাই বলবেন তাই হবে। এখন প্লিজ্ শুয়ে পড়ুন, ঢাকায় যেয়ে আপনার কথা শুনবো, তারপর আপনি যা বলবেন
তাই হবে।'
নীলা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।
অরণ্য আর কিছু না বলে চাদর আর বালিশ নিয়ে
বারান্দায় চলে যায়, দরজার
পাশে যেয়ে বলে আপনার মনে যদি ভয় কাজ করে ইচ্ছে করলে এই দরজাটা বন্ধ করে দিতে
পারেন।
নীলা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবে ছেলেদের বিশ্বাস নেই, তাই সে দরজাটা লাগিয়ে দিবে কিন্তু দরজাটা লাগানো কি
ঠিক হবে কি হবে না ভাবতেই তার চোখে পড়ে টি টেবিলের ছুরিটার দিকে, সে সেটিকে নিয়ে খাটে এসে বসে থাকে কিছুক্ষণ, ক্লান্ত
শরীরে কখন ঘুম এসে পড়ে সে টের পায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আশেপাশের সবকিছু গুছানো,
তা দেখে তার কিছুই মনে হয় না চুপ করে বসে থাকে বিছানায়, ভাবতে থাকে এ থেকে সে কখন মুক্তি পাবে?
নীলা আর অরণ্য বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছে, দুজনে পাশপাশি বসা কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। নীলা
বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, অরণ্য একবার তাকাল তার
দিকে, ক্ষানিকটা সময় পর অরণ্য নীলাকে বলল,
- এখনো ঠিক করিনি, এক বান্ধবী আছে তার মেসে উঠবো।
- তাকে ফোন করে আগেই জানানো উচিত ছিল, যদি উনার বাসায় কোন ঝামেলা থাকে।
- তা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, আমি দেখে নিবো।
আচ্ছা বলে অরণ্য চুপ হয়ে গেল।
ওদিকে নীলা আমাকে ফোন দিল, জিজ্ঞাসা করলো মেসে থাকতে পারবে কিনা?
বললাম ‘দুইজন গেস্ট আছে দোস্ত, কিন্তু তুই এই সময়ে মেসে
থাকার কথা বলছিস!! তোর না বিয়ে, কোথায় তুই?
কি হয়েছে?’
নীলা, আচ্ছা ঠিক আছে বলে ফোনটা রেখে দিল। ওদিকে অরণ্য কিছুটা খেয়াল করছিল পরে সে
জানতে চাইলো, কি হয়েছে?
অরণ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার জানতে চাইলো, কোন সমস্যা কিনা।
নীলা ইতঃস্থত বলল,বান্ধবীর বাসায় জায়গা নেই, সমস্যা নেই আমি বাসা খুঁজে নিবো।
- প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বলছিলাম কি, বাসা পাওয়ার আগ
পর্যন্ত যদি আমার বাসায় থাকতেন,যদি আমাকে বিশ্বাস করেন।
নীলা ভাবতে থাকলো এই মুহূর্তে হাতে যে টাকা আছে তা
দিয়ে ভালো বাসা পাওয়া যাবে না, একা সব জায়গায় গেলেও সবাই সেই একই সুযোগ লুটবে, তারচেয়ে
বরং উনার সাথে আজ যাই, দেখা যাক কি হয়, ভেবে সে তাকে বলল,
- আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার বাসা কোথায়?
- ধানমন্ডি, ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট-এ থাকি। আপনি চিন্তা করবেন না, থাকার
মতো রুম আছে।
বলে নীলা মনে মনে বলতে লাগলো, লোকটাকে দেখেতো ভদ্র মনে হচ্ছে নাকি ভদ্র সাঝার ভান
করছে, ভেবে সে জিজ্ঞাসা করলো,
- আপনি আমাকে না দেখে কীভাবে বিয়ে করলেন, আশ্চর্য!!
- আমি কোনদিন বাবার অবাধ্য হইনি তাই।
- চলে এসেছি প্রায়, চলুন নামার জন্য তৈরি হই।
কিছুক্ষণ পর, বাস স্টপেজ-এ এসে থামল। বাস থেকে নেমে অরণ্য একটি ট্যাক্সি কে ডাকল। দুজন
ট্যাক্সিতে চড়ে প্রায় মধ্যরাতে অরণ্যের বাসায় পৌছালো। নীলা বাসায় ঢুকে দেখে বাসাটা
বেশ বড়। অরণ্য নীলাকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে বলল, যান ফ্রেশ হয়ে
নিন, আমি রেস্ট্রুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসছি। অরণ্য স্টার
থেকে খাবার এনে দেখে নীলা ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে আছে। অরণ্য নীলা কে বলে, সরি দেড়ি হয়ে গেল। সে তারাতারি টেবিলে খাবারটা রেখে বলল নিন খেয়ে নিন আমি
ফ্রেশ হয়ে পরে খেয়ে নিব। নীলা কিছু বলল না। অরণ্য আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে
গেল। নীলা উঠে দাঁড়িয়ে চারিপাশটা দেখতে লাগলো, দেখতে পেল
ঘরটা বেশ গুছানো, কিছুটা এগিয়ে সে বেলকনিতে যেয়ে বাহিরে
অবলোকন করতে লাগলো। কিছুক্ষণপর অরণ্য এসে কি ব্যপার
আপনি দেখি কিছু খাননি, চলুন
খেয়ে নিবেন। নীলা চুপ করে আছে, অরণ্য আবার চলুন বলে সে
টেবিলের দিকে যেতে লাগলো। নীলাও এসে চেয়ারটায় বসলো, খেতে
খেতে সে অরণ্য কে বলল,
- আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন খেয়ে নেন, তারপর শুয়ে রেস্ট নেন। কাল
সকালে খেয়ে চলে যাবেন।
নীলা চুপ করে রইলো। তাদের খাওয়া শেষ অরণ্য নীলাকে
রুম দেখিয়ে চলে আসলো তার রুমে।
নীলা ঘুম থেকে উঠে দেখে ওয়াশরুমে যেতে দেখে অরণ্য রান্না ঘরে রান্না করছে, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে ওয়াশরুমে চলে যায়। বের হয়ে
দেখে অরণ্য টেবিলে খাবার সাঝাচ্ছে। অরণ্য নীলাকে দেখে বলে আপনি উঠেছেন, খাবার তৈরি, আমি অফিসে যাবো তাই একটু তারাতারি,
আপনি যদি আরও পরে খান তাহলে পরে খেতে পারেন। নীলা কিছু না বলে খাবার
টেবিলে গিয়ে বসলো, জিজ্ঞাসা করলো,
- আমিও বের হয়ে যাবো, ক্যাম্পাসে যাবো, তারপর বাসা
খুঁজবো।
- কিছু
যদি না মনে করেন, একটা
প্রশ্ন করব।
- আচ্ছা
আপনার প্ল্যান কি? কি করবেন?
- এখানে
পড়াশুনা শেষ করে গবেষণা করতে বাইরে চলে যাবো।
- কতদিন আছে, এইতো দুই সেমিস্টার।
- ভাল।
বলছিলাম, বাসা না পেলে এখানে চলে আসলে ভালো
হয় না? অন্য কাউকে ঝামেলায় ফেলা দরকার কি!!নীলা কিছু বলে না,
চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণপর ওরা বেড়িয়ে পড়ে, রাস্তায়
দাঁড়িয়ে অরণ্য একবার নীলাকে বলে পৌঁছে দিবে কিনা। নীলা বলে, না,
দরকার নেই, আমি একাই যেতে পারবো।
( তারপর নীলা মা-বাবা আসে, দুদিন অরণ্যের বাসায় থাকে। পরে বান্ধবীদের কাছে টাকা ধার নিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। বান্ধবীরা তাকে বুঝানোর
চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই শুনেনি। টিউশনি করে সে টাকা শোধ করে, লেখাপড়া শেষ করে , অরুণ সারের
সাথে কিছু ঘটনা উল্লেখ করব এখানে)
নীলার গত সেমিস্টারের রেজাল্ট বেরিয়েছে, অরুণ স্যার, নীলাকে ডেকে বলল,
-অভিনন্দন নীলা, তুমি তোমার রেজাল্ট ধরে রেখেছো, তুমি আবারও ফার্স্ট হয়েছো।
-তারপর, তোমার সামনের প্ল্যান কি?
-স্যার, আপনার কাছে থিসিস করতে চাচ্ছিলাম।
-হুম, নতুন একটা টপিক খুঁজছিলাম, দেখি চিন্তা করে, তোমাকে জানাব আমি।
বলে নীলা বেরিয়ে আসছিল।হঠাৎ স্যার নীলাকে ডেকে বলল,
-এই নীলা শুনো, আমার একটা প্রাক্তন ছাত্র আছে, তরুণ গবেষক। সে আমার
কাছে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট চেয়েছিল। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের তেজষ্ক্রিয়তা
নিয়ে গবেষণা করছে। তুমি বরং ওর সাথেই কাজ কারো। খুব মেধাবী একজন ছেলে, অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করে এসেছে, এখন কাজ করছে
বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না ওর সাথে কাজ করার
মত কেউ আছে।
- স্যার আপনার সাথে করলে ভালো হয় না স্যার,উনাকে আপনি অন্য কাউকে দেন।
-না, ও আমার খুব প্রিয় একজন ছাত্র, তোমার ভালোর জন্যই
বলছি। আমি চাই তুমি ওর সাথেই থিসিসটা কমপ্লিট করো।
- কাল এসো একবার, আমি ওকে বলে তোমাকে পাঠিয়ে দিবো ওর কাছে।
- ঠিক আছে স্যার, তাহলে আজ চলে যাই।
নীলা ক্যাম্পাস থেকে সোঝা চলে আসলো টিউশনিতে। তার
ভীতরে আজ স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ কাজ করছে।
পরদিন সে অরুণ স্যারের কাছে গেল, স্যার নীলাকে দেখে বলে, এসেছ
নীলা? সে রাজী হয়েছে। উনি একটি খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এই নাও ঠিকানা।
নীলা হাত বাড়িয়ে খাম নিল, খামটি খুলে দেখে নাম দেখে, ডঃ
সেলিমুর রাহমান অরণ্য, রিসার্চার, পরমাণু
শক্তি কমিশন, শাহ্বাগ, ঢাকা। নীলা
কিছুটা আশ্চর্য হল, ভাবতে থাকলো, এ কি
ঐ উনি? আবার সেই ভাবছে, উনি এতবড়
রিসার্চার হবে কিভাবে, অরণ্য নামতো কয়েকজনেরই হতে পারে।
স্যার বলল, এই নীলা, কি ভাবছো? তুমি এখনই
চলে যাও।
নীলা বলল, জ্বী স্যার, বলে নীলা বেড়িয়ে আসলো। গেইটের দারোয়ানকে
বলল, ডঃ সেলিমুর সাহেবের সাথে দেখা করব।
দারোয়ান বলল, আপনি এখানে দাঁড়ান, আমি স্যারকে বলে আসছি।
কিছুক্ষণপর, দারোয়ান এসে বলল, স্যার আপনাকে যেতে বলেছে সাথে সে
রুমটাও দেখিয়ে দিল।
নীলা, সোজা চলে গেল রুমের সামনে, গিয়ে দেখে রুমে কেউ নেই।
কিছুক্ষণপর পিয়ন চা নিয়ে এসে নীলাকে বলে, আপনি এসেছেন, স্যার আপনাকে
বসতে বলেছে। স্যার একটু ল্যাবে কাজ করছে, আপনি বসুন, স্যার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
পিছন থেকে নীলা শুনে, “আপনি এসেছেন, সরি আপনাকে
অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম”।
নীলা কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়েই হতবাক, দেখে এ আর কেউ নয়, অরণ্য।
অরণ্য বলে, কেমন আছেন আপনি?
নীলার পক্ষ থেকে কোন উত্তর আসে না।
অরণ্য বলে, কেমন আছেন আপনি, কেমন চলছে দিনকাল?
নীলা এবার বলে, জ্বী ভালো। মনে মনে সে ভাবতে কত বড় একজন মানুষ, কিন্তু
কি সহজ সরলভাবে জীবনযাপন করে, বুঝতেই পারিনি। একটিবার গর্ব
করে আমাকে নিজের পরিচয়টুকু দেয়নি।
অরণ্য বলে, অবাক হয়েছেন? আমি কিন্তু অরুণ স্যারের কাছ থেকে নাম
শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম আপনি।
চলুন ল্যাবটা দেখে আসি, বলে অরণ্য
বেড়িয়ে গেল।
নীলাও কিছু না বলে তার পিছনে পিছনে যেতে লাগলো।
অরণ্য একে একে সবকিছু পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, আর নীলা খুব আশ্চর্য হচ্ছে।
আমার বাড়িতে অনেক রেফেরেন্স বই আছে আগামীকাল নিয়ে
আসবো, আপনি নিয়ে বাসায় একটু পড়াশুনা
করবেন।
- আপনার কষ্ট করে আনা লাগবে না, আমিই আপনার বাসা থেকে নিয়ে আসবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন তাহলে আজ বেরিয়ে যাই। কাল
থেকে শুরু করব কাজ। আশা রাখি চার মাসে শেষ করতে পারবো।
নীলা বাসায় যেয়ে ভাবতে থাকে মনে মনে বলতে থাকে, ‘জীবনে অরুণ স্যার ছাড়া কোন পুরুষকে আমি বিশ্বাস
করতে পারিনি। কেন জানি লোকটাকে ভালো মনে হচ্ছে, মনে মনে
ভাবছে, তার মার কথাগুলো, বান্ধবীদের
কথাগুলো। আসলেই কি সে ভুল করেছে।’ পরমুহূর্তেই ভাবে, আমি আমার লক্ষ্যে পৌছাবোই, শুধু শুধু অপ্রয়োজনীয় কথা
ভাববার দরকার নেই।
নীলা পরদিন সকালেই অরণ্যের বাসায় যেয়ে কলিং বেল বাজাল, অরণ্য দরজা খুলতেই দেখে নীলা, সে
বলে
-আসুন, ঘরে আসুন। রান্না করছিলাম।
-কাজের বুয়া রাখলেই পারেন।
-ওদের রান্না খেতে পারি না, আসলে লন্ডনে থেকে
অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন আর পরিশ্রম মনে হয় না। আপনার বইগুলো
ওখানে রেখে দিয়েছি, আপনি ঐ গুলো দেখতে থাকুন আমি তৈরী হয়ে
নেই।
ও হ্যা, আপনি নাস্তা করেছেন?
-হ্যা, আমি নাস্তা করেছি, আপনার তাড়াহুড়া করা লাগবে না, আপনি আপনার গতিতে চলুন
আমি বরং বই গুলো খুলে দেখি।
অরণ্য, নাস্তা শেষ করে তৈরী হয়ে, দু'জন
একসাথে রিক্সায় উঠলো। নীলা হুট করে জিজ্ঞেস করে,
-আপনি গাড়ি কিনেন না কেন, এভাবে চলতে কষ্ট হয়
না আপনার?
-না কষ্ট হয় না, ঢাকা শহরের ধূলোময় পরিবেশ আর
জ্যামের সাথে গাড়ি মানায় না। বরং রিক্সাই ভালো, জ্যামে পরলে
হেঁটে চলে যাই। অনেক টাইম বেঁচে যায়, আমার কাছে সময়টা অনেক
বেশী ইম্পরট্যান্ট। তাছাড়া বাসাতো বেশী দূরে না।
- তা ঠিক। তো আপনি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করে দেশে কেন চলে আসলেন?
এই শহরে আপনি কি আপনার মত কিছু করতে পারবেন?
- না, তা হয়ত পারবো না, ইচ্ছে
করলে থেকে যেতে পারতাম কিন্তু বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমার এই দেশটাকে। দেশের
মানুষজন হয়ত আমাকে কিছু দিবে না কিছু কিন্তু দেশটা তো আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে তাকে
আমি ছেড়ে কিভাবে যাই, কিছুটা ঋণ শোধ না করতে পারলে জীবন আর
সার্থক হলো কই।
নীলা কথাগুলো খুব মুগ্ধ হয়ে শুনছে। হঠাৎ সে শুনে, "এসে পড়েছি। এখন নামা যাক।" বলে অরণ্য
নেমে পড়ল। নীলা নামার পর তারা সোজা ল্যাবের অভিমুখে। অরণ্য সব বুঝিয়ে দিচ্ছে নীলাও
সব করে চলছে।
নীলার কাজ দেখে অরণ্য খুবই মুদ্ধ দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলা তাকাতেই অরণ্য চোখ নামিয়ে নেয়।
এভাবে চলে যায় অনেকটাদিন। দু'মাসপর অরণ্য দেখে কাজ খুব দ্রুত মিলে যাচ্ছে। ভেবেছিল
সে জটিলতা আসবে কাজে কিন্তু আসেনি। সে এ কৃতিত্ব নীলাকেই দিতে চায়। সে না থাকলে
হয়ত এত দ্রুত এতটা এগোতে পারতো না।
ওদিকে নীলা ভাবতে থাকে উনার সাথে কাজ না করলে
কতকিছু অজানা থেকে যেত। কত মেধাবী লোকটা। হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা বাঁজতে থাকে, নীলা ফোনটা হাতে তুলেই দেখে অরণ্যের ফোন। ফোন রিসিভ
করতেই শুনতে পায়,
-হ্যালো, কোথায়
আপনি? আপনার সাথে জরুরি কথা ছিল।
-ফোনে না, আপনি মিড নাইট সানে চলে আসুন। লাঞ্চ
করতে করতে বলি।
-আচ্ছা, আমার আধা ঘন্টার মত লাগবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি অপেক্ষা করছি।
নীলা রুমটা গুছিয়ে, তৈরী হয়ে মিডে গিয়ে দেখে অরণ্য বসে আছে কোনার
টেবিলটায়। নীলা গিয়ে বলল-
-সরি ১০মিনিট দেড়ি হয়ে গেল।
-সমস্যা নাই, কি খাবেন বলেন। খেতে খেতে কথা
বলি।
-আপনি করুণ, যা ভালো তাই করুণ।
-নীলা, ওয়েটারকে ডেকে বলল, ভেজিটেবল, চিকেন আর চাইনিজের প্যাকেজটা দেকিয়ে বলল
দুটো দিয়ে যান। এবার বলুন কি বলবেন।
- জ্বি, আপনাকে আসলে ডেকেছিলাম, আগামীকাল বাবা-মা আসবে। কি করে আপনার কথা বলব বুঝতে পারছি না। বলছিলাম,
আপনি যদি দুইটা দিন কষ্ট করে আমার বাসায় থাকতেন, খুব ভালো হতো। ডিবোর্সের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ, কিছুদিনের
মধ্যে কাগজ চলে আসবে।
অরণ্যের মুখে বাসায় থাকার কথাগুলো শুনতে নীলার ভালোই লাগছিল,
ডিবোর্সের কথাটা শুনতেই তার মনটা কেমন করে উঠলো। সে অরন্যকে বলল,
বলে নীলা আর কথা বলল না। দু'জন খাওয়া শেষ করে
বাড়ি চলে আসলো কিন্তু তাদের মধ্যে আর খুব বেশী কথা হলো না।
পরদিন খুব সকালে নীলা অরন্যের বাসায় চলে গেল। গিয়ে দেখে অরণ্য মাত্র
ঘুম থেকে উঠেছে। নীলা যেঁচে জিজ্ঞাসা করলো, রাত জেগেছেন বুঝি?
-হুম, আজ রান্না করতে পারবো, বাহিরে খেতে হবে। আপনি নাস্তা করেছেন?
- না, কেন বাহিরে খাবেন। আজ রান্না করবো।
বাজার সদাই আছেতো?
-না না, আপনি কষ্ট করবেন কেন, তারচেয়ে বাহিরে থেকে আনি।
-কেন আমার হাতের রান্না খেতে পারবেন না, যদিও
আমি ভালো রান্না করি না।
-না না, কি বলেন, আপনি
কষ্ট করবেন, তাই বলেছি।
নীলা আর কিছু না বলে, সোজা রান্না ঘরে চলে গেল। গিয়ে দেখে রান্না ঘরটাও
বেশ ঘুছানো। মনে মনে সে ভাবে, এই লোকটা এত ঘুছানো, কেন আমি তাকে ছেড়ে দিচ্ছি। আবার বলে, উনিও একবারও
আমাকে কিছু বলল না, উনি কি বলতে পারতো না, আমরা একসাথে থাকি। হয়ত আমাকে ভালো লাগেনি। ওদিকে অরণ্য ওয়াশ রুম থেকে
বেরিয়ে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে নীলার রান্না করা দেখছে। হুট করে নীলা চোখ পড়ে,
সে বলে
-না, দেখছি আপনি ভালো রাধুনীও বটে।
-কিভাবে বুঝলেন, রান্নাই খেলেন না!
-রান্না করার ধরণ দেখলেই বুঝা যায় কে ভালো রাঁধতে পারে।
-তাই বুঝি? তবে আপনিও কিন্তু বেশ রাঁধতে
পারেন। আপনার বোধহয় দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনি টেবিলে বসুন, আমি
সব নিয়ে আসছি।
[অরন্য রান্নার প্রশংসা করেছে,
তার বাবা-মা এসেছে, নীলা তার বাবা মাকে একবারে
বউয়ের মত আপ্যায়ন করেছে]
[থিসিসের রিপোর্ট লেখা শেষ, অরন্য আর নীলা অরুণ স্যারকে দেখিয়েছে। অরুণ স্যার খুব প্রশংসা করেছে তাদের
কাজকে। বড় একটা জার্নালে তাদের থিসিস পাবলিশড হয়েছে, ওদিকে
নীলা গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করা শুরু করেছে
অরন্য তাকে হেল্প করছে।
এক সকালে নীলা, তার ই-মেইল চেক করতে দেখে, ডঃ স্টেফেনসন, এমআইটি থেকে তাকে ইনভাইট করেছে তার অধীনে ফেলোশিপ করার জন্য। নীলা দেখেই
খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে, সাথে সাথে সে অরুন স্যারকে জানাল। অরুণ
স্যার তাকে অভিনন্দন জানালো। ফোনটা রেখে সে অরণ্যের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গিয়ে
দেখে অরণ্য খাচ্ছে, অরণ্য নীলাকে দেখে অবাক হয়, নীলা ই-মেইলটা তাকে দেখায়, অরণ্য খুব খুশি হয়।
নীরা যেদিন চলে যাবে, তার আগেরদিন অরণ্য নীলাকে বাসায় আসতে বলে, নীলা বাসায় আসে, কিন্তু অরন্যের আসতে দেরি হয়। তখন নীলা এ সময়ে, অরণ্যে ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীর সামনে যায়, তার চোখ পড়ে টেবিলে ডায়েরিটার উপর, ডায়েরি খুলতেই
দেখে অরন্যের হাতের লেখা, সে পড়তে থাকে, তাকে নিয়ে অরণ্যের লেখা গুলো পড়তে, সে বুঝতে পারে
তাকে অরন্য কতটা ভালোবাসে, ডায়েরিটা পড়ে সে রেখে দেয়। সে মনে
মনে খুব আনন্দ পায়, এই মুহুর্ত অরন্য বাসায় আসে। কিছুক্ষণ পর,
অরণ্য তাকে ডিবোর্স লেটারটা হাতে দেয়। নীলা লেটারটা দেখে খুব কষ্ট
পায়, অভিমান করে সে তখনই বাসায় চলে যায়। বাসায় যেয়ে
লেটারটাকে ছুড়ে ফেলে সে অনেক কান্না করতে থাকে। পরদিন সে এয়ারপোর্টে যাওয়ার লম্বা
চিঠিতে বলে
"আপনি আমাকে ভালোবাসেন,
একটিবার মুখে বলতেন বা নাই বলতেন কেন লেটারটি দিয়েছেন? আমি আপনার ডায়েরিটা
পড়েছি, কিন্তু আপনি আপনি লেটারটি হাতে দিয়ে সবকিছু নষ্ট করে
দিয়েছেন। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, আমি চলে যাচ্ছি, ভালো থাকবেন। আমার চোখ দেখে বুঝতে পারেননি আমি আপনাকে ভালোবাসি, আসলে আপনি ডায়েরিতে মিথ্যা বলেছেন। আপনি মিথ্যুক, কাউকে
আর আমি বিশ্বাস করি না।"]
অরণ্য, ই-মেইলটি পড়ে একাই হাসতে থাকে।
ওদিকে নীলা চলে যায় আমেরিকা, সে ডঃ স্টেফেনসনের সাথে দেখা করে। উনি নীলাকে একটি
ইনভাইটেশন কার্ড দেয় একটি ওয়ার্কশপের। নীলা যোগ দেয় ওয়ার্কশপে, উপস্থাপক
ঘোষণা করে প্রধান বক্তা ডঃ সেলিমুর রহমান সে তখন চমকে যায়। ভিতরে ভিতরে তার ভালো
লাগে পরমুহুর্তে তার মনে হয়ে ডিবোর্সের কথা, অনুষ্ঠান শেষ
করে, নীলা কিছুটা ইচ্ছে করে যখন চলে যাচ্ছিল, অরণ্য তার সামনে এসে দাঁড়ায়। সে দু'হাত বাড়িয়ে দেয়
নীলার দিকে, নীলা আসে না তার দিকে। সে তখন নীলার দিকে ছুটে
গিয়ে বলে,
-আরে বোকা মেয়ে তুমি খুলে দেখেছিলে ঐ খামের ভিতর কি ছিল।
-ওটায় ছিল, আজকের অনুষ্ঠানের লেটার। আমি
মিথ্যা বলেছিলাম। তোমার ফ্লাইট ক্যানসেল করে আমরা দু'জনে
একসাথে আসতাম পরের ফ্লাইটে। কিন্তু তুমি এমনভাবে চলে গেলে।
-ইউ লায়ার। পরে তো অনেক সময় ছিল, আমাকে বলতে
পারতে।
-তাহলে যে আজকের সারপ্রাইজটা হতো না।
নীলা আবারও ইউ বলে অরণ্যের বুকের দিকে থাপ্পড় দিতে, অরণ্য তার হাতটিকে ধরে টান দিয়ে নীলাকে বুকে জড়িয়ে
নেয়, একটু চাপ দিয়ে বলে অনেক ভালোবাসি তোমায়। নীলা অরণ্যের
বুক মুখ গুজে থেকে বলে, মিথ্যুক। আর চারিপাশে নেমে আসে ঝুম
বৃষ্টি। এ যেন শুকনো মরুর বুকে সুখের শ্রাবণ ঢল।