Sunday, August 19, 2018

শুদ্ধ শহর

হাত বাড়িয়ে দাও প্রিয়তমা,
      ভুলে যাও এ শহরের অন্ধকারময় চিলেকোঠা;
এসো যাই আমাদের পথে,
       তোমায় নিয়ে ভেঙ্গে দিবো ঐসব পিচঢালা পথ
               ভূকম্পনের ধস নামাবো আমরা হেঁটে হেঁটে;
কতসব অন্ধ অমানুষের দল পেঁচার মত
    দিনদুপুরে গাপটি মেরে বসে আছে
                 রাতভরে খেলা করে
                       ঐ সকল ইট-পাথরের দেয়ালের ভিতর।
যাদের দেহে রং নেই,
          প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই,
                      আজ তাদের ধ্বংশ অনিবার্য।
হাতে হাত রাখো প্রিয়তমা,
      উত্তাপে সুনামি বইবে ঐসব অসুখের ভীড়ে;
বিমানবন্দরের বিমানগুলো
              জাংসনের ট্রেনগুলো
                      দূরপাল্লার বাসগুলো
বস্তাভর্তি ট্রাকগুলো
         লঞ্চের কন্টিনার আর কেবিন গুলো
                       উল্টে যাবে আজ ভালোবাসার স্রোতে।

          হেঁটে যাবো আমরা এ শহর ভেঙ্গেচূরে
          কয়েক মাইল দূরে ঐ ছোট্ট কুড়েঘরে;
উন্মাদের মত ফেলে দিবো মরিচা ধরা
                  অসভ্য সমাজের ঘুনে খাওয়া পোশাক।
উলঙ্গ শরীরে পুরোনো গাছের বাঁকল জড়িয়ে
    সারারাত জোৎস্না দেখবো
               দিনভরে জলকেলিবো
                 ভালোবাসবো আমাদের ছোট্ট সংসার।
আমাদের সুখ--
           ঘরে আসবে ফুঁটফুটে সন্তানেরা,
আমরা দেখবো--
      ক্ষুদ্র মশালের নিচে বেড়ে উঠা সন্তানেরা
                  নষ্ট শহরে নিয়ে আসবে শুদ্ধ সুন্দর আলো।
_______________________________________________
১৯/০৮/১৮
সোনারগাঁ

Wednesday, August 15, 2018

বঙ্গবন্ধু

অধিকার আদায়ের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অতুলনীয়, এদিক দিয়ে অগ্রজ মহান নেতারা তাঁর কাছে লীন হয়ে যায় আর অনুজদের কথা টেনে আনলে হবে মূর্খামি।  জীবনের ৪৬৮২দিন বা প্রায় তের বছর কারাগারে থেকেছে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে। সেই স্কুল জীবন থেকে পা দিয়েছিলেন লড়াইয়ে, ৭১ এসে পেয়েছিলেন সফলতা এবং মুক্ত করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষদের।

তাঁর যেমন জনপ্রিয়তা ছিল তেমনি তাঁর শত্রু ও তাদের দোসরও কম ছিল না। তাদের মধ্যে ছিল আবার অনেক চাটুকারের দল। তাদের জন্য এবং স্বাধীনতা অর্জনের সফলতার জন্য দম্ভে অধিকহারে আমিত্ব ব্যবহারে কিংবা নতুন রাষ্ট্র চালনা করার অনভিজ্ঞতার জন্য তাঁর শাসনামল অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ এবং সমালোচনার জায়গা তৈরী হয়েছিল এটা সত্যি। কিন্তু তাঁকে সংশোধনের সুযোগটা দেওয়া হলো কোথায়? উল্টো ৭১-এর প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে সেসব কুলাঙ্গের দল নিয়ে আসলো আমাদের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়, ১৯৭৫ এর আগস্ট মাস। যে ভার পুরো জাতি বইবে সারাটি জীবন।

তাছাড়া ৭৫ পরবর্তী শাসকবর্গ, তাঁর ক্ষণিকের শাসন ব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধ জায়গাগুলোকে ব্যবহার করে তাঁর সারা জীবনের অর্জন ও অবদানগুলো মুছে দিতে চেয়েছিল যা ছিল রীতিমতো অপরাধ। যার কারণে এখনো অনেক সাধারণের কাছে বঙ্গবন্ধু ৭২-৭৩ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু হয়ে আছে। অথচ এদেশে বঙ্গবন্ধুর সম্মান পাওয়ার কথা ছিল বিশ্ব নন্দিত মহৎ নেতাদের মত অন্তত মহাত্মা গান্ধী কিংবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মত। কিন্তু দেশের মধ্যে কয়জন তাঁর মহৎ স্যাক্রিফাইসকে অনুধাবন করতে পেরেছে কিংবা তাঁকে দিতে পেরেছে সেরকম সম্মান আর শ্রদ্ধা?

১৫/০৮/১৮

Monday, August 13, 2018

গতিশীলতা

কোন কিছু আজ থেমে নেই চলছে অবিরত
পৃথিবী চলছে, নক্ষত্র চলছে, চলছে রেলগাড়ি
মানুষ্যদল চলছে, চলছে তারা যে যার মত
পুষে রঙ্গিন স্বপ্ন,গড়ছে বাহারি রঙ্গের বাড়ি।

কোথাও কারও থামবার নেই কোন সময়
জীবনের তাগিদে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে
কোথাও মৃত্যু, কোথাও দুঃখ তা অগ্রাহ্যময়
তাদের কাজে কিংবা তাদের কোন আয়োজনে।

বয়ে চলে নদীর স্রোত থেমে থাকে শুধু দুটি কুল
পড়ে থাকে কবিতা, পড়ে থাকে ঝড়ে যাওয়া বকুল
আর পড়ে থাকে পাঠাগারে জড়ো শত শত বই
এই পৃথিবীতে মানুষ তারা, তাই আজ মানুষটি নেই।
____________________________________________
০৭/১০/১৬
নারায়ণগঞ্জ

কতসুর আজ ডানা মেলেছে

কতসুর আজ ডানা মেলেছে মনের ভিতর
তোমার ঐ হাসি রাঙ্গিয়েছে আমার অন্তর।

পাখির মত ডানা মেলে
মনের ঠিকানা ঐ আকাশের নীলে
জোৎস্না মাখা কোন স্বর্ণালী রাতে
হাজারো রঙ্গের কত বর্ণালীতে
          শুধু তোমারই ছবি আঁকি।

আনমনে তাঁকিয়ে খোলা জানালায়
মেঘদলের খেলা দেখি বড় অবেলায়
আঁধো ঘুমে কোন ঘুমের ঘোরে
হঠাৎ জেগে ওঠা কোন খুব ভোরে
          তোমরই পরশে এ মন যে জাগে।
___________________________________
১৩/০৯/২০১৬

যতবার আমি

যতবার আমি তোমা হতে সুদূরে চলে যেতে চাই
তবুও তোমারই ভাবনায় শুধুই ভেসে যাই
যতবার আমি আড়শিতে ফিরে ফিরে তাকাই
তোমার ঐ আঁখি দুটো শুধুই দেখতে পাই।।

কথা ছিল প্রেমের বাগানে ফোঁটাব মোরা শতদল
কি করে যে এই পথটাই হয়ে গেল বদল
যতদুর জানি সম্মুখের পথখানি
        বড় বন্ধুর হবে
                 তবুও এ পথটাই বেছে আমি নিতে চাই।

এই হারমানা ভালোবাসা রাখিবো ব্যাথার সুরে
বাঁজিলে আর ডাকিবো না থাকিবো বহুদুরে
কখনো আকাশের তারা, কখনোবা পথহারা
        পথিক হয়ে
                 ঐ পথে হারিয়ে আমি যেতে চাই।
________________________________________
২০১৬ সাল

বুকপকেটে জোনাকিপোকা

ক্লান্তিহীন পূর্ণ অবকাশে এক সাঁঝের বেলায়
তোমার চোখে পড়েছিল চোখ চোখের খেলায়
হৃদয় নৌকা ভাসলো তখন উত্তাল সাগরে
অতলে ডুবলো অন্তর্যামী আশ্বিনের ঝড়ে।

আমি ঘাস, তুমি শিশির আমাদের প্রেম হলো
প্রভাতের পর রোদের ইশারায় তা হারিয়ে গেলো
গ্রীষ্ম-বর্ষা পার হয়ে আসলো আবার শীত
নব সুরে উঠলো বেঁজে সেই পুরোনো গীত।

জানি না কিছু, দেখি না কিছু সর্বদিকে আর
কুঁড়ি থেকে ফুঁটেছিল ফুল তোমার-আমার
প্রকৃতির বিমুখতায় আসলো বৈরী সমীরণ
তোমার-আমার হলো না যে মধুর মিলন।

নিঝুম রাত্রিতে নিদ্রাহীনতায় ভেঙ্গে পড়ছি একা
তুমি যে আমার বুক পকেটে প্রথম জোনাকিপোকা।
___________________________________________
২০/০৫/১৫
সোনারগাঁ

অনুকাব্য

১.

টুপটাপ শব্দের বৃষ্টির খেলায়
মর্মে বাজে তোমারই গান
ঘরের কোনে সন্ধ্যাবেলায়
তোমাকেই খোঁজে আমারই প্রাণ।



২.

সবুজ সুন্দর মিষ্টি আবহাওয়া
মম হৃদের একটুখানি চাওয়া
       প্রিয়, তোমার পানে আসা
       হাতটি ধরে পাশাপাশি বসা
অস্থিরতার আবরণে
      প্রণয়ে গভীর চুম্বনে
         সুখের তরীতে ভেসে যাওয়া।

৩.

মেঘের মত এলো চুলে
প্রিয়, তুমি কাছে এলে
         এই গোধুলী বেলায়
অপেক্ষার প্রহর ঘুচালে
হৃদয়ের তষ্ণা মিটালে
         তোমার হাসির মেলায়।
______________________________
২০১৫

বসন্তের অভিপ্রায়

এই সুন্দর সন্ধায় হাটতেছি শহুরে পিচঢালা পথে
ধুলিকনা উড়িয়ে বইছে চঞ্চল দখিনা বায়
সবকিছু ছাপিয়ে প্রকৃতির গৌরব উঠিয়াছে মেতে
গুনগুনিয়ে চারিপার্শ্ব যেন বসন্তের গান গায়।

তবুও ক্লান্ত আমি, এই যান্ত্রিক আর ব্যাস্ত শহরে
নাহি পাওয়া যায় সবুজ আমের মুকুলের গন্ধের স্বাদ
গলা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় ইট-কুঠিরে
দেখা নাহি মিলে বৃক্ষের আড়ালে ঊষার খেলার প্রাত

মন তখনি চলিয়া যায়, ফেলে আসা আমার ছোট্ট গায়
যেখানেই শিকড় সেখানে বিরাজ কবির সকল অভিপ্রায়।
________________________________________________
২৯/০১/২০১৫
পলাশী, ঢাকা

রাজ্য

রাজ্য যখন রত্নে ভরা
দুই রাজা তখন মাতোয়ারা
সোনার মুকুট পড়বে কখন
দু'চোখেতে তাদের স্বপ্ন ভরা।

সোনার আসন করবে শাসন
রাজারা হয় যে তখন পাগল
লড়ে সৈন্যরা, দেখে তাহারা
আর প্রজারা তখন গরু-ছাগল।
___________________________
০৩/০২/১৫
ঢাকা

ভালোবাসার জয়

জীবনের সময় সমগতিতে যাচ্ছে চলে
নিবীড় ভালোবাসা রেখেছি বুকের তলে
          জানি হবে না আর মিলন
          হবে না দেখা তোমার চলন
   ভিতরেও নাহি কোন আশা
         শুধু পুঁজে রেখেছি হারমানা ভালোবাসা।

প্রার্থণা করি, ফুঁটুক কুড়ি
নতুন করে, তোমার ঘরে
      আর
নেমে আসুক বসন্তেরই হাওয়া
      এ আমার একান্তই চাওয়া।

স্বপন পাশে যদি তোমার দেখা পাই
পুরোনো কন্ঠে আবারো বাণী শুনিতে চাই
                 অস্পৃশ্য পরশে ভোলাবে মন
                  রঞ্জিত হবে আমারই শ্রবণ
     এইতো আমার মৃত্যুঞ্জয়
     এইতো আমার ভালোবাসার জয়।
_____________________________________
০৮/০১/২০১৫
ঢাকা

 
         

জন্মদিনে

নব বসন্তের পদার্পণে
         সত্তার নব জাগরণে
নব চেতনায়, নব স্বপনে
        মুখোরিত হোক তোমার জীবন।
আজ এই শুভদিনে
        উৎসব মুখোর আবরণে
লাল-নীল বর্ণীল রঙে
        নেমে আসুক সুখের প্লাবন।
______________________________
১৯/১২/১৪
সোনারগাঁ

Sunday, August 12, 2018

দুই বোন

আমার আছে দুটো বোন
       বড় বোনটির নাম হিমা
আলসের রানী
      ঘুমোয় শুধু জানি
             বকাঝকা খেয়ে
             নির্বোধ হয়ে
         কাজ গুলো করে নিজের মত কিমা।

এক বছরের ছোট তার
      বোনটির নাম লায়লা।
গম্ভীর হয়ে থাকে সে
     নিজ ভূবনের গড়া আকাশে
         রাগ করে সে মাঝে মাঝে
ঝড় তুলে যে তার সাজে
     সবকিছু করে ফেলে কয়লা।

       আমি তাদের ছোট্টভাই
       ভূবনে যেন আর কেহ নাই
নাম আমার রোমিও
      যেন আদরের মধ্যমণি
    সারাদিন জ্বালাই তাদের
    সুবিধাগুলো করি নিজের
        তারপরও আছি তাদের নয়নেরও মণি।
_______________________________________________
১৬/০৮/১৪
আজিমপুর

যায় নাকো কভু ভোলা

আমারই ভূবনে               আমারই গগনে
         শুধুই তোমারি পথ চাহি
ভালোবাসার তরে          ডুবিয়াছি মরে
            ফিরিবার পথ নাহি।
ঠেলিয়াছো দূরে           হঠাৎ আমারে
       দাওনি ভূবন জুড়ে ঠাই
জানো নাকো তুমি       এই হৃদয়ে আমি
      শুধু তোমারে খুঁজিয়া পাই।
জ্বলিতেছে আগুন     নেই মনেতে ফাগুন
      তোমারই বিচরণের অভাবে
হৃদয় কুঠিরে              আলোক নাহিরে
       দ্বীপ্তিরূপে কি কভু আসিবে?
অনুক্ষণ ভরিয়া           যায় শুধু খেলিয়া
          স্মৃতির পাতার খেলা
বৎসর চলিয়া যায়      তোমারে আপনায়
         যায় না কভু ভোলা।
______________________________________
০৪/১১/১৪
ঢাকা

বিধাতা তুমি

আপন সৃষ্ট জগতে পেয়েছি তোমায় বিধাতা রুপে
করেছিলে নিপুণ চারুশিল্পে গোলাপ ফোঁটা মম চিত্তকে
নিদারুণ সাধনায়-তোমার দয়ায় পেয়েছি তোমারি স্বর্গকে।
তবে কেন নিক্ষেপ করলে নরক-জ্বালাময় উত্তাপে?

ইশ্বর তুমি, অবিনশ্বর তুমি,তোমার মহিমায় নিরুপায় আমি
মম তপস্যা বিষাক্ত নীলিমা,প্রার্থনা তবুও ছাড়িনি প্রভু।
বিছিয়ে রেখেছি পিয়াসী হৃদ,তোমার লীলা বুঝিনি কভু!
চিত্ত নিবেদন স্বর্গের কামনা-বাসনায়, আমার পূজারী  তুমি

____________________________________ 

২০১২ সালের লেখা 

অপেক্ষা

তুমি কি শুনতে পাও? আমার হৃদয় যে-
                      বারবার উচ্চারণ করছে তোমারই নাম।
তুমি কি দেখতে পাও? আমার চোখের জলে যে-
                     
মিশে আছে তোমায় নিয়ে আঁকা স্বপ্ন


আমি জানি-
তুমি সব শুনতে পাও, দেখতে পাও
তুমি থাকো শুধুই নিশ্চুপ, বুকে চাপিয়ে রাখো সব।
জড়তায় তুমি কিছু বল না
কিন্তু প্রকৃতি যে আমায় সব বলে দেয়।
প্রকৃতি যে এক করেছে আমাদের মন প্রাণকে।
তারপরও কি তুমি মুখ ফুটে কিছু বলবে না?

আমি জানি-
একদিন বলবে, সমস্ত জড়তা কাটিয়ে
তখন তুমি যে কোন বাধাই মানবে না।
আমাকে আলিঙ্গন করে ওষ্ঠধর কেঁপে কেঁপে বলবে
ভালোবাসি তোমায়, ভীষণ ভালোবাসি


আমি যে অপেক্ষায় আছি এই মধুর সময়ের জন্য;
অপেক্ষায় আছি তোমার গ্রীবাকে রংঙিন করবার জন্য;
অপেক্ষায় আছি তোমার ললাট-কপোল-চিবুক স্পর্শ  করার জন্য;
অপেক্ষায় আছি তোমার ওষ্ঠে  উত্তাপ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য

আমি জানি-
তখন তুমি মাকে কোন বাধা দিবে না।
সর্বস্ব বিলিয়ে দিবে আমায়। তুমি জান-
আমার সকল ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য,
আমার সকল অনুভূতি শুধুই তোমার জন্য





-------------------------------------------------
২০১১-২০১২ সালের লেখা 

মৃত্যুর মিছিলে আরও একটি মৃত্যু

১.

দূর হতে আযানের ধ্বনি প্রতিটি অট্টালিকায় প্রতিধ্বনিত হয়ে মধুর সুরে ঘুমন্ত শরীফকে জাগালো। শরীফ চোখ মেলে তাকাতেই নতুন ভোরের মৃদু আলো জানালা দিয়ে তার চোখ স্পর্শ করছে।  ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে ফযর নামাযের জামাতের সময় চলে যাচ্ছে। সে তারাতারি বিছানা থেকে উঠে ওযু করে মসজিতে চলে যায়নামায শেষ করে ঘণ্টাখানেক কোরআন পড়ে হোটেল থেকে নাস্তা কিনে বাসায় ফিরে।  গোসল সেরে নাস্তা খেয়ে আলনা থেকে শার্ট, প্যান্ট আর টাইটা নিয়ে তৈরি হতে থাকে অফিসে যাওয়ার জন্য।  টাইটা পরার সময়  সে মনে মনে বলে, ‘কেন যে এটা পড়তে বাধ্য করেছে?’ জুতোটা পরে দাঁড়িয়ে খেয়াল করে দেখে প্যান্টটা কণ্টার উপরে ঠিক আছে কিনা দেখে  অফিসে চলে যায়, সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে রাত আটটা-নয়টা বাজে বাসায় ফিরে।   

শরীফউল্লাহ শরীফফরিদপুরের এক কৃষক পরিবারের ছেলে। পরিবারে বড় ছেলে, ছোট বোনটি ক্লাস সিক্স এ পড়ে।  স্নাতকোত্তর শেষ করে এক বছর ধরে ঢাকার অদূরে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছে।  দেশে যে চাকরির অবস্থাতাতে শরীফের মতো ছেলেদের চাকরি পাওয়া দুষ্কর ব্যাপারতারপরও দীর্ঘদিন পরিশ্রম আর মেধার গুনে এই চাকরিটি পেয়েছে। অফিসের নিকটে একটি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া করে থাকে সে তার বাবা দেশে টুকিটাকি কৃষি কাজ করে। পূর্বে অন্যের জমি চাষ করত শরীফ চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে আর করে না। তার বাবা-মার শহর ভালো লাগে নাতারা গ্রামে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেশরীফও জোর করে না তার সাথে থাকার জন্য।

শরীফের বাবা ওদিকে পাশের গ্রামের এক ধার্মিক পরিবারের মেয়ের সাথে ছেলের বিবাহ ঠিক করেছে। মেয়ের নাম কুলসুমমাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেছে।  তার বাবা ফোন করে বলে দিয়েছে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসতে।  সেও তার বাবার কথামতো আফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যায়।

সপ্তাহ খানেক পরবিয়ের ছুটি শেষে বউকে নিয়ে সে ভাড়া বাসায় উঠেছে।  বিয়ের পর তার দিনলিপিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাজারে যাওয়া,  মসজিদ থেকে ফিরার সময় সে এখন নিয়মিত বাজারে যায় তারপর বাসায় ফিরে।  কুলসুম তার জন্য রান্নাবান্না শেষ করে সকালের খাবার এবং হটপটে দুপুরের খাবার রেডি করে রাখে।  শরীফ চলে যাবার পর, কুলসুম অবসর সময়ে কোরআন-হাদিস পড়ে।তাছাড়া শরীফও কুলসুমকে এলেম শিক্ষা দেয়ধর্মীয় বিধি-নিষেধ সম্পর্কেপর্দা করার উপকারিতা সম্পর্কে বলে।    

এক সকালে শরীফ বাজার থেকে আসতে না আসতেই দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পায়।  শরীফ দরজা খুলে দেখে, পিন্টুর ভাই মিন্টু ও তার বন্ধু রবিন।তাদেরকে দেখে শরীফ অনেকটা ভীত কারণ তারা পিন্টুর লোক। পিন্টু এলাকার মস্ত বড় ক্যাডারস্থানীয় এমপি তাকে পোষণ করে। ভীত হয়েই কুলসুমকে সে বলল, তাদের চা দিতে।  চা খেতে খেতে তারা বলল, “দাদা একটা কনসার্টের আয়োজন করতাছিতো পিন্টু ভাই আমনের কাছে আসতে কইলো।বুঝছেনইতো কিয়্যারলাইগ্যা আইছি!’’ সে তাদেরকে ১০০০ টাকা দিয়ে তারাতারি বিদায় করে।  টাকাটা নিয়ে মিন্টু ও রবিন বেরিয়ে আসলোরাস্তায় বের হয়েই মিন্টু রবিনকে বলল,
শরীফ ভাইয়ের বউডার কন্ঠটা শুনছস জোশ্ না। ’
‘হ্যা চরম টোনটা,কত আস্তে আস্তে কথা কইলো দেখলি।   কিন্তু তারেতো দেখতে পারলাম না, যেইভাবে পর্দা করছে চোখটা পর্যন্ত দেহা যায় না। ’
‘বোধয় ভালোই হইবোলম্বাও শরীফের মত’ বলতে বলতে তারা চলে গেল তাদের ক্লাবের দিকে।   

শরীফ শুক্রবারে আছরের নামায পড়ে কুলসুমকে নিয়ে বাড়ির পাশের রাস্তাটায় হাঁটতে বের হয়েছেহাঁটতে হাঁটতে তারা বাজারের পাশের রাস্তাটিতে যায়।  শরীফ আঙ্গুলটাকে উঁচু করে কুলসুমকে বলে, ঐ যে দোকান গুলো দেখা যাচ্ছে না ওটা বাজারওখান থেকেই আমি বাজার সদাই কিনি।  কুলসুম চোখ ফিরিয়ে দেখতে পেল অনেক পর্দাশীল ও সাধারণ মহিলা বাজারে এসে বাজার-সদাই কিনছে।  কুলসুম অবাক হয়ে শরীফকে বলছে,
দেখঅনেক মহিলারা বাজারে এসেছে। ’
‘হুমঅনেকেই আসে। ’  
‘তাদের কি স্বামী নেই যে তারা বাজারে আসে?
‘হুমআছে।  কিন্তু তাদের স্বামীদের সময় নেই বাজারে আসার। তুমি হয়তো জান নাবাংলাদেশের চাকরির কি অবস্থা! কিছু কিছু কোম্পানি লোকদের খাঁটিয়ে মারেতারা হয়তো রাত এগারটার আগে বাসায় ফিরতে পারে না এমনকি শুক্রবারেও অফিসে যাওয়া লাগে।  অর্থ উপার্জনের জন্য অফিসকে তারা ঘর-বাড়ি বানিয়ে ফেলে।  তুমি দেখো না আমিও মাঝে মাঝে এগারটায়-বারটায় বাসায় ফিরি। বেসরকারি চাকরিগুলো এমনই। তাই আমিও চাই টুকিটাকি দরকারি জিনিসগুলো তুমি বাজারে এসে নিয়ে যাও। ঐ যে ওখানে কর্ণারের দোকানটা দেখছ নাওটা আমার পরিচিত দোকান। ওখানে বলে দিবোযদি কিছুর প্রয়োজন হয় উনার কাছে আসলেই নিতে পারবে। ’  
‘হুমপারবো।  ওরা যদি নিতে পারে আমি পারবো না কেনভালই হলোতুমি মাঝে মাঝে টুকিটাকি দরকারি জিনিসগুলো আনতে ভুলে যাও ওগুলো ছাড়া এতদিন রান্না করতে হতো।  এখন আর তা হবে নালাগলে আমি নিয়ে যাব। ’  
‘তাহলে তো ভালোই হবে। 'চল এবারবাসায় ফিরি' বলে, শরীফ কুলসুমকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।   

পরদিন শরীফ অফিস থেকে ফিরার সময় দেখে তার বাসার সামনের গলির রাস্তার মোড়টায় লোকজন ভীড় করে কি যেন আলোচনা করছে।  সে উৎসুক হয়ে ওখানে গিয়ে ঘটনার অনেকাংশ শুনল।  শুনে তার মনটা ব্যাথিত হয়ে উঠলোবাসায় ফিরে গোসল করে রাতে খাবারের সময় কুলসুমকে বলতে লাগলো-
জানো আজ রাস্তায় শুনলাম রহিমের মেয়েটা আছে নাও নাকি পাগলের মত আচরণ করছে। ’
‘কেনো কি হয়েছে হঠাৎ?
‘হাবু চাচা বলছেপিন্টুর বাবা গতকাল নাকি মেয়েটাকে দোকান থেকে চিপস আর কেক কিনে দিয়ে উনার সাথে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল।  উনার বাসা থেকে ফিরার পর থেকে মেয়েটা এমন করছে।  কেউ কেউ বলছে পিন্টুর মা নাকি গত পনের দিন ধরে বাসায় নেইবাবার বাড়িতে গিয়েছে।  মনে হয়পিন্টুর বাবা কিছু একটা করেছে। কেউ তো পিন্টুর ভয়ে জোর গলায় কিছু বলতে পারছে না।  আবার এ সকল ঘটনা বেশী রটলে মেয়েটার অবস্থা কি হবে বুঝতেই পারছো। ’  
‘ছিঃ এইটুকু মেয়েকেবয়স কত হবে ৭ কি ৮! ভাবতেই অবাক লাগছেমানুষ এরকম পশু হয় কিভাবেআমার খুব খারাপ লাগছে বলে কেঁদে ফেলল কুলসুম।  তাদের কি কোন বিচার হবে নাবলে আবারও কাঁদতে লাগলো। ’
‘কে করবে বিচারতারা সব এক দলের লোক। সরকার তো তাদের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে।  পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নিবে না। ’  

২.

শরীফের অফিসে সকালে কাজ থাকে না বললেই চলে।  এই সময়টাতে অফিসের সকলে মিলে একটু গল্প গুজব করে।  শরীফ খুব একটা গল্পে শামিল হয় না।  কাজ গুলো গুছিয়ে রাখে এই সময়েমাঝে মাঝে দু'একটা কথা বলে ওদের সাথে যুক্ত হয়।  এক সকালে আরিফ পত্রিকায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো-
‘আহারে! দেশে আর কোথাও নিরাপত্তা নেইক্যান্টনমেন্টেও মেয়েটা ধর্ষিত হলোগরীব ঘরের মেয়ে টিউশনি করে ফিরছিল’ 
গরীবুল্লাহ সাহেব বলল, ‘ফেসবুকে দেখলাম মেয়েটা নাকি মঞ্চে অভিনয়গান-বাজনাও করত। 
মোহম্মদ আলী কথা টেনে বলল, ‘ঠিকই আছে এই ধরণের মেয়েদের বেশী করে ধর্ষণ করা উচিত। ধর্ম-কর্ম না করে গান-বাজনা করেপর্দাতো করেই নাসব দেখিয়ে বেড়াবে আর পুলারা ধর্ষণ করবে না তো কি করবে ? ’
গরীবুল্লাহ বলল, ‘আলী সাহেব একদম ঠিক কথা বলেছেন। ’ 
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘এটা আপনি কি ধরণের কথা বললেন, আলী সাহেবএমন যুক্তি দাঁড় করালেন যে চোর চুরি করেছে তাই দোষটা চোরের নয়ভূক্তভোগীর।  পোশাকের জন্য নারী কিভাবে ধর্ষিত হয় বলেন দেখি।  এই যে কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম সাত বছরের মেয়েটা যে ধর্ষিত হলোকেন হলোপশ্চিমা বিশ্বের মেয়েরা শুধু টপ পরে ঘুরে বেড়ায়তাহলে তাদের আরও বেশি ধর্ষণ হওয়ার কথা ’ 
আলী বলে, ‘দূর মিয়া আপনি দেখি কিছুই জানেন নাপরিসংখ্যান হাতিয়ে দেখুনবছরে সবচেয়ে বেশী ধর্ষণ হয় আমেরিকাতে।  আর দেখুন আরব দেশ গুলোতে কোন খবরই পাওয়া যায় না ’
‘হ্যাআমি সত্যিই জানি নারেফারেন্স দিন পরিসংখ্যানেরদেখি কোথায়?’ 
‘রেফারেন্স কি আমি মুখস্থ করে রেখেছি নাকি!’
‘আর উদাহরণ দিলে শুধু আমেরিকার দেন কেনআমেরিকা কি একমাত্র দেশ আর কোন দেশ নেই। সুইডেননরওয়েসুইজারল্যান্ডজাপাননিউজিল্যান্ড এসব দেশের উদাহরণ দেন।  জানেনএ সকল দেশে আপনার-আমার দেশের মেয়েরা রাতের ১০-১১টায় সাইকেল চালিয়ে অফিস থেকে নির্ভয়ে বাসায় ফেরে।  আর আপনার আরব দেশের কথা কি বলবওরাতো এক কাজের মেয়েকে বাবায় একদিন তো ছেলে একদিনদাসী বলে কথা।  মেয়েদের তো ওদের দেশে কোন মূল্যই নেইধর্ষণ করা তো কোন অপরাধ নাতো আবার ধর্ষণের খবর আসবে কোথা থেকে। দিনশেষে তেল বিক্রি করে বেইলি ড্যান্সের পার্টিতে টাকা উড়ায়আর তো কোন কাজ নেই তাদের। ’
আলীর চেহারায় উত্তেজনার ছাপমুখে কিছু বলতে পারছে না।  গরীবুল্লাহ সাহেব বিচলিত হয়ে চুপ হয়ে আছে।
আমি বললাম, ‘আপনার কি মেয়ে দেখলেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে যায় নাকিরাস্তায় পাগলীদের দেখলে তো হওয়ার কথাতারাতো উলঙ্গ হয়ে হাঁটে কিন্তু তাদের দিকে আপনারা ফিরেও তাকান না।  তাতে কি প্রমাণ হয় না এগুলো আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা?
আলী খুব রাগান্বিত হয়ে আমার টেবিলে জোরে এক থাপ্পর দিলপারলে এখনই আমাকে পিটাবে!!
হাসতে হাসতে বললাম, ‘টেবিলে থাপ্পর দিয়ে লাভ নেই যুক্তিতে আসুন। সেটাতো পারবেন নাপারবেন শুধু ধর্ষকদের পরোক্ষভাবে সাপোর্ট দিতে। দেখুন পৃথিবীর ইতিহাস ঘেঁটে অপরাধীধর্ষক যুগ যুগ ধরে ছিলথাকবে। কিন্তু তাদেরকে ধমিয়ে রাখতে হবে কঠোর আইন দ্বারা।  পর্দা দিয়ে ওদের দমন করা যাবে না। ’
‘আপনিতো ইহুদি-নাসারাদের দালাল দেখছিআপনার সাথে কি যুক্তি-তর্ক করব ’
‘আপনাদেরতো এই একটাই বুলি।  কোন কিছু করার ক্ষমতা নেইপারেন সব কিছুর শেষে এই একটি কথা টেনে আনতে। রেডিও আবিষ্কারের পর বলেছেন। তারপর টিভিমোবাইলইন্টাররেটফেসবুকের সময়ও বলেছেন এগুলো ইহুদি-নাসারাদের তৈরী এগুলো ব্যবহার করা হারামএখনতো এ সবই আপনারা ব্যবহার করছেন।করছেন কি পুরো দখল করে রেখেছেন।আপনাদের মত লোক অনেক দেখেছিমোবাইলের গ্যালারীতে একসাথে পর্ণ ভিডিও আর ওয়াজ রাখেনএকা থাকলে পর্ণ আর সবার সামনে ওয়াজ। আবার দেখি বউকে রেখে মাসে একবার হলেও ব্রোথেলে যান আর মুখে শুনান ধর্মের কথা। আপনারা বড্ড অভিনয় করতে পারেন ’
আলি এবার প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে ঐ নাস্তিকের বাচ্চা বলে প্রায় হাত তুলে ফেলেছিলশরীফ এসে তাকে  শান্ত করল। সে বলল, “থামুন এবারঘটনাকে আর বাড়াবেন না’’  কিছুক্ষণ পর শরীফ বলল, ‘আলি সাহেব আপনি যতই বলুনধর্ষক একজন অপরাধী তার শাস্তি হওয়া উচিত। নাহলে এই অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে। ’
আলি জিম ধরে বসে রইলোকিছু বলল না।  ম্যানেজার সাহেব অফিসে আসলোসবাই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
বাড়িতে এসে শরীফ খাওয়ার সময় কুলসুমকে অফিসের ঘটনাগুলো বলল। কুলসুম বলল, “মেয়েদের পর্দা করা অবশ্যই প্রয়োজনইসলামের বিধান অবশ্যই পালনীয়। তাই বলে ধর্ষণের প্রধান কারণ পর্দা নয়এগুলো বিকৃতরুচির পুরুষপশুর চেয়ে অধমদের কাজ।  তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। ’’

৩.

শরীফ প্রায়ই টুকিটাকি জিনিস আনতে ভুলে যায়আগে তার দ্বিতীয়বার যাওয়া লাগতোএখন কুলসুমই আনে বাজার থেকে। একদিন কুলসুম বাজার থেকে আসছিলপিন্টু আর পিন্টুর দল তার ক্লাবের সামনে আড্ডা মারছে।  কুলসুমকে দেখার পর পিন্টুমিন্টুকে জিজ্ঞাসা করলো-
‘এইডা ক্যাডা রে?
‘দাদা ঐ বাড়িতে ভাড়া থাকে না শরীফহের বউ ’
‘লম্বা-চূড়া তো ভালোইবোরকা ছাড়া দেখছসনি কহনো?’
‘নাদাদা।  একদিন বাসায় গেছিলাম তহনও দেহিনাইবাসায়ও পর্দা কইরা থাহে।  তয়কন্ঠ হুনছিলামখুব আস্তে সুন্দর কইরা কথা কয় ’
‘তাইলে তো মালডা ভালো হইবোআর পরহেজগার মাইয়্যারা বেশী সুন্দর হয়।  একদিন হের বাসায় যামুনে মনে কইরা দিস তো ’
‘আইচ্ছা দাদা ’
কুলসুম তাদের পাশ কাটিয়ে বাসায় চলে আসলো।  সে আসার সময় কিছুটা খেয়াল করেছিল ছেলে গুলো তাকে নিয়ে আলোচনা করছে।  শরীফ আসার পর ঘটনাটি বলল।  
শরীফ বলল, ‘থাক্ তোমাকে আর বাজারে যাওয়া লাগবে নাআমি সব নিয়ে আসব

কিছুদিন পর শরীফের সাথে পিন্টুর দেখা।  পিন্টু শরীফকে দেখে বলল,
‘কি শরীফ ভাই কেমন আছেনআছেন তো ভালোই। ভাবীরে নিয়া আসছেনভাবীর হাতে একদিন চা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন নাএইডা কেমন কথা!’
আচ্ছা যাবেন একদিনবলে শরীফ চলে আসলো।
পিছন থেকে শরীফ শুনতে পেল, ‘আইচ্ছা চা খাইতে আইতাছি একদিনরেডি থাইককেন চোখে মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে শরীফ বাসায় আসলো। কুলসুমের চোখে তা ধরা পড়লখাবারের সময় তাকে সে জিজ্ঞাসা করল,
কি হয়েছেকিসের চিন্তা করছো?’  
‘পিন্টুর সাথে দেখা হয়েছিল রাস্তায়।  সে নাকি বাড়িতে চা খেতে আসবেকিন্তু কেন বুঝতে পারছি না। কারণ ছাড়া তার তো আসার কথা নয়। ’ একটু চুপ থেকে আবার বলল, ‘বাসাটা বদলে ফেলা প্রয়োজনএখানে আর থাকা যাবে না। ’
তুমি যা ভালো মনে কর’ বলে কুমসুমটেবিলের প্লেটগুলো হাতে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটে গেল। ওদিকে শরীফ কিছুক্ষণ চেয়ারটায় বসে রইলো

দুইদিন না যেতেই পিন্টু হাজির।  শরীফ দরজা খোলা মাত্রই পিন্টু –
কি শরীফ ভাই আছেন কেমনভাবীর হাতে চা খাওয়ার জন্য আইয়্যা পড়ছি।  ঘরে বসাইবেন না?
‘হুম আসুনবসুন’ বলে শরীফ কুলসুমকে বলে আসলো চা করার জন্য।
‘আরে ভাই আপনি এত ছুটাছুটি করতাছেন ক্যানন এখানেদু'একটা কথা কই। ’
‘হুমবলেন। ’  
‘অনেক দিন ধইরা এলাকায় আছেন রাজনীতি করেন না ক্যান? আপনার মত লোক আমাদের লাগেশিক্ষিত মানুষ আবার আল্লা-বিল্লাহও করেন। আপনারে এলাকার মানুষ ভালোই জানে।  আপনি আইলে আমাদের দলের সুনাম বাড়বেযোগ দেন আমাদের লগে। ’
‘চাকরি করে এগুলো করার সময় কোথায়তাছাড়া আমি এ এলাকার মানুষ না আর আমার এগুলো ভালো লাগে না। ’
‘হু বুঝলামতো একদিন ক্লাবে তো আইতে পারেন। ’
ওদিকে শরীফ কে ডাকল চা নেওয়ার জন্য।  শরীফ চা নিয়ে পিন্টুকে দিল।  
পিন্টু চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ‘আহ্অমায়িক চাজীবনেও এমন চা খাই নাই।  ভাবী বানাইছে নাকই ভাবি কইধন্যবাদটা সামনাসামনি না দিলে অয় না। ’
‘ভিতরে কাজ করছে আমি বলবো আপনি প্রশংসা করেছেন। ’
কি চা খাইলাম রে’ বলে চায়ের শেষ চুমুকটা দিয়েই পিন্টু উঠে দাঁড়িয়ে আবার বলতে লাগলো আমার আবার একটু ফিল্ডে যাইতে হইবোআপনি একদিন যাইয়েন ক্লাবে’’
দেখি সময় পেলে যাওয়ার চেষ্টা করবো’
ভাবি নির্ঘাত অনেক সুন্দরীএত সুন্দর চা সুন্দর মানুষ ছাড়া বানাইতে পারে না’ বলে পিন্টু বের হয়ে গেল।  
শরীফ রুমের ভিতর থেকে হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলোতারপর দরজাটা লাগিয়ে রুমে চলে আসলো।  

৪.

শরীফ অফিস থেকে ফেরার সময় নতুন বাসা খোঁজ করে বাসায় ফিরে।  সেদিনের পর থেকে শরীফের মুখে দুঃশ্চিন্তার ছাপ।  নতুন একটা বাসায় না উঠা পর্যন্ত তার শান্তি আসবে না।  একদিন রাতে খাবারের সময় কুলসুম কিছু একটা বলতে চেয়ে থেমে গেল।  শরীফ বললকিছু বলবে?’ 
কুলসুমের চোখে-মুখে লজ্জামুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।  কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে তাৎক্ষনিক বলে ফেলল, ‘আল্লাহর রহমতে তুমি বাবা হতে চলেছো’। 
শরীফ কথাটা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে নাসে কুলসুমের দিকে তাকিয়ে আছে আর কুলসুম লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সমস্ত দুঃশ্চিন্তাগুলো শরীফের কাছ থেকে যেন ধুয়ে-মুছে গেলভিতরে কেমন যেন একটা আনন্দ বয়ে যাচ্ছেঘুমানোর আগে শরীফ দু'রাকাত নফল নামায পড়ে আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করল। পরদিন হাসিখুশি হয়েই অফিসে গেল। কুলসুম শরীফের দিকে তাকিয়ে স্বস্তিবোধ করছেপিন্টু আসার পর থেকে কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল। আজ সে আগের রূপটা দেখতে পেলমনে মনে বলতে লাগল, ‘আল্লাহ্ যেন আমাদের সবসময় এমনই রাখে’  

রান্না করতে গিয়ে কুলসুম ভাবলো আজ ভালো কিছু রান্না করবে।  ফ্রিজ থেকে মাংসের প্যাকেটটা নামিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখল।  রান্নার সবকিছু গুছাতে গিয়ে দেখতে পেল মাংসের মশলা নেই।  একবার ভাবলো মশলা ছাড়াই রান্না করবে আরেকবার ভাবলো রান্নার মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ ভেবে শরীফকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল মশলা আনতে বাজারে যাবে কিনাশরীফ অনুমতি দিল।  কুলসুম কিছু টাকা নিয়ে বাজারের দিকে বের হয়ে গেলদ্রুত হেঁটে যাওয়ায় রাস্তায় যে লোকজন নেই চোখে পড়ল না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রবিন দেখেছিল কুলসুম বেরিয়েছে।  রবিন পিন্টুকে গিয়ে খবরটা দিল।  পিন্টু খবর শুনে সাথে সাথে ক্লাবের সামনে রাস্তায় দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুলসুম বাজার থেকে ফিরছেএগুচ্ছে বাসার দিকে।  কিছুদূর আসার পর লক্ষ্য করলোরাস্তাটা আজ বেশ নির্জন।  তার মনে কেমন একটা ভয় ঢুকে গেল। সে যতদিন বাজারে গিয়েছে এতটা নির্জন কখনো দেখেনি। আসতে আসতে যখন ক্লাবের সামনে আসলোদেখলো পিন্টু দাঁড়িয়ে আছে তার দলবল নিয়ে। সে তাদেরকে দেখে হাঁটার গতি আরও দ্রুত করলো। সামনে আসার পর পিন্টু জিজ্ঞাসা করলো,- 
ভাবি কেমন আছেন?’  
কুলসুম কিছু বলল নাসে এগিয়ে যেত চাইলো কিন্তু পিন্টু গিয়ে পথটা রোধ করে বলতে লাগল-
‘অনেকদিন ধইরা আপনেরে দেখার স্বাদ জাগছিল। আজ আপনেরে সামনে পাইছিসে স্বাদটা পূরণ করতে চাই ভা.......বী। 
‘আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে পথটা ছাড়ুন দয়া করে। 
‘আপনার চেহেরাডা দেখাইলে ছাইড়া দিমু। নাইলে আমরাই আপনেরে দেখতে নিয়া যামু। ’ 
‘কি বলছেন আপনিদয়া করে অসভ্যবতা করবেন না। ’  
আমরা তো যথেষ্ট সভ্য আছি বলে’ পিন্টু কুলসুমের হাতটা ধরে ক্লাবের দিকে টান দিলতার সঙ্গীরা মুখ চেঁপে ধরে তাকে সাহায্য করল। কুলসুমকে নিয়ে বন্দী করল ক্লাবের একবারে কোনার ঘরটায়।  পিন্টু ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিল।  কুলসুম ওদিকে চিৎকার করে বলছে, ‘দয়া করে এ কাজ করবেন না আমার পেটের দু'মাসের সন্তানটা’, বলে হু হু করে কাঁদতে শুরু করল।  পিন্টু উচ্চস্বরে, ‘এইডাইতো ঠিক সময়’ বলে কুলসুমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।  
কিছুক্ষণ পর পিন্টু বাইরে এসে তার দলবলকে বলল, 'কেডা কেডা যাবি রেযা একটা একটা কইরাতয় মারিস না।'
ওদিকে কুলসুম প্রায় অচেতনএকটার পর একটা ঝাঁপিয়ে পড়ছে কুলসুমের অচেতন দেহের উপর। কুলসুমের দেহ নিঃশ্চুপ হয়ে গেছেশরীরের প্রতিটি কোষে ছড়িয়ে পড়া ধ্বংসাত্মক জীবাণুগুলো রক্তবীজের মত বংশবৃদ্ধি করে চলছে তার দেহের ভিতরএকটি সময় কুলসুমের দেহের প্রতিটি কোষ নিজেদের সংবরণ করে গুটিয়ে নিয়েছে কেউ তখনও টের পায়নি।

বিকেলের দিকে শরীফ একবার ফোন দিয়ে দেখলফোন বন্ধ আছে। ঘন্টাখানেক পর আবারও ফোন দিয়ে দেখল যে ফোন বন্ধ।  সে আর তখন থাকতে পারল নাবসকে বলে অফিস থেকে সরাসরি বাসায় আসলোএসে দেখল বাসা তালা দেওয়া। শরীফ কিছুই বুঝতে পারছে না।কি করবে সে খুঁজে পাচ্ছে না, আমাকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা বলল। আমি তাৎক্ষণিক ছুটে আসলামশরীফকে নিয়ে এ বাড়িও বাড়ি গিয়ে খোঁজ করতে লাগলাম। রাত নটা বাজেশরীফ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।  শরীফের মনে ভয় কাজ করছিল পিন্টুকে নিয়ে আমাকে সে বিষয়ে ইঙ্গিত করল। 
বললাম, ‘চলেন থানায় জিডি করে আসি’
‘কিভাবে করবো সন্দেহ করেতাছাড়া পিন্টুর বিরূদ্ধে থানায় মামলা নিবে না।
‘তাহলে হারিয়ে যাওয়া নিয়ে মামলা করব’ বলে শরীফকে থানায় নিয়ে গেলাম। শরীফ থানার ওসি সাহেবকে সবকিছু বলল।  
ওসি বলল , “দেখেন কোথাও গেছে হয়ত
শরীফ বলল, ‘ওর কোথাও যাওয়ার কথা নয়’
ওসি হেসে বলল, ‘এরকম কত দেখেছি পরে দেখি আরেক স্বামীর হাত ধরে হাজির।  আপনার এ কেইস নাকি’?
উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘আপনি মামলা নিবেন না?’   
ওসি বলল, ‘না’
পরিচিত এক ডিআইজিকে ফোন না দিতেই ওসি সাহেব বলে উঠলো ‘আচ্ছা আমি মামলাটা নিচ্ছি’  

পরদিন সকালে শরীফ বেড়িয়েছে, উদাস ভাবে হাঁটছে।  হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার চোখ পড়ল ময়লার স্তুপের কাছে পড়ে থাকা কালো কাপড়টির উপর। তার কেন যেন মনে হচ্ছিল এটা কোন বোরকা। সে দৌড়ে গেল ওখানেগিয়ে তুলে নিল কাপড়টিতুলে নিয়েই সে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে হু হু করে কান্না শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর সে  আমাকে ফোন দিয়ে জানালো,তাৎক্ষনিকভাবে আমি পুলিশকে জানালামপুলিশ এসে বোরকাটি নিয়ে পর্যালোচনা করতে লাগল।  বোরকাটির একটি বুতামও নেইকিছু অংশ ছেঁড়া। পুলিশ ধারণা করলযদি মার্ডার হয়ে থাকে তাহলে আশেপাশে হয়ত কোন চিহ্ন পাওয়া যাবেতারা পাশের নালাড্রেন গুলোর চারিপাশটা অনুসন্ধান করতে লাগলো কিন্তু কোনকিছুর চিহ্ন পাওয়া গেল না। পরদিন পুলিশ এসে বুলড্রেজার দিয়ে ময়লার স্তুপে খোঁজ করতে লাগল কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না।  

এদিকে শরীফ একেবারে নিঃস্তব্ধখাওয়া-দাওয়া একদম ছেঁড়ে দিয়েছে। শরীফের আত্মীয়-স্বজন এখন তার বাসায়। আমি যাওয়ার পথে শরীফের বাসায় থাকি কিছুক্ষণ। শরীফ তার ঘরে দরজা লাগিয়ে একা একা বসে থাকে। মানসিক শক্তি আসলে নামাযে দাঁড়িয়ে যায় আর দুআ করতে থাকে কুলসুমকে যেন জীবিত পাওয়া যায়। হঠাৎ পুলিশের ফোন আসেফোন রিসিভ করতেই শুনতে পায় বাজারের পাশে ব্রীজটার কাছে আসতে।  ফোনটা রেখে সে দৌড়ে সেখানে যায়গিয়ে দেখে লোকজন ওখানে ভীড় করে আছে।  সে ভীড় ঠেলে ভিতরটায় প্রবেশ করেই দেখতে পায় পুলিশ বস্তার ভিতর থেকে একটা নারীর লাশ বের করছে। সে দৌড়ে লাশের কাছে গিয়ে লাশটি উল্টিয়ে চিরচেনা প্রিয়তমার চেহেরা দেখেই স্তম্ভিত হয়ে যায়আকাশের দিকে তাকিয়ে সে হু হু করে কাঁদতে থাকে, ঐ দুরের আকাশটা তার দিকে ভেঙ্গে পরেসূর্যটা যেন প্রচণ্ড বেগে তার দিকে ধেয়ে আসছেএকটি সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।

শরীফ জেগে ওঠে দেখে  আমাকে, জিজ্ঞাসা করে, ‘কুলসুম কোথায়’?
পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে গেছে’
কান্না বিজরিত কন্ঠে, ‘কেন দিয়েছেন ওকেতারা কিছুটি বের করতে পারবে নাঅনেক কষ্ট দিবে আমার কুলসুমকে’ বলে কান্না করা শুরু করে দেয়সে।  
আমি তার কাঁধে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকি।  
পরদিন জানা যায় ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গিয়েছে। খবরটা শুনার পর শরীফের চোখে যেন ভীষণ অন্ধকার নেমে আসেঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় তার শরীরের ভীতর দিয়েপৃ্থিবীর সমস্ত কিছু তার মাথার সামনে ঝড়ের বেগে ঘুরতে থাকে।   

শরীফ কারও সাথে কোন কথা বলে নারুমে একা চুপচাপ বসে থাকে। সন্ধ্যায় আমি আসার পর শরীফ আমাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে "কি অপরাধ ছিল কুলসুমেরকি অপরাধ ছিল আমাদের সন্তানের, তারা কেন আমাদের সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দিল না, কুলসুম কেন মা হওয়ার আনন্দ পেল না, সেতো পর্দা ছাড়া কখনো বের হয়নি...তবে কেন তাকে ঐ পশুগুলো ছাড়ল না” বলে কান্না শুরু করে। আমি শরীফকে সান্ত্বনা দেয়ার কোন ভাষা খুঁজে পেলাম না। শরীফকে একা রেখে কিছুক্ষণ পর অামি বেরিয়ে আসিরাস্তার ওপাশের দোকানটা থেকে একটি সিগারেট ধঁরিয়ে উদাসীন ভাবে আকাশের দিকে হাঁটতে থাকি আর মনের মধ্যে বাজতে থাকে শরীফের কথা গুলো, হাতের সিগারেট টান দিতেই লবণের স্বাদ লাগলো বুজতে বাকি রইলো না চোখের পানি বেঁয়ে ঠোঁট ভিজে মুখে ঢুকেছে , হঠাৎ অজান্তেই হাসি দিয়ে বলতে লাগলাম,    

“হায়রে আমার দেশ, তোমার কত সন্তানদের এভাবে আর চলে যেতে হবে? এই মৃত্যুর মিছিলে আর কতজন শামিল হলে, তোমার কুলাঙ্গার সন্তানরা ধর্ষকের বিপক্ষে দাঁড়াবে?’’



০৩-০৪-২০১৮

স্বপ্নগুলো

আজ মুখোর ঝড়ের দিনে আমার চোখের স্বপ্নগুলো দূর আকাশ হতে ঝড়ে পড়ে বৃষ্টির সাথে পত্র-পল্লবে নেঁচে বেড়ায়, গেয়ে যায় নতুন শাখার সুরের তালে, মিশে যায়...